ফরিদপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (এফইসি) ছাত্ররাজনীতির নিষিদ্ধের মধ্যে ছাত্রদলের কমিটি গঠন করায় দিনভর উত্তেজনা বিরাজ করছে ক্যাম্পাসজুড়ে। কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ জানিয়ে ছাত্রদলের কমিটিতে থাকা শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারেরও দাবি করেছেন।
মঙ্গলবার (৪ মার্চ) সকাল থেকে কলেজের প্রশাসনিক ভবনের সামনে ছাত্ররাজনীতির নিষিদ্ধের দাবিতে অবস্থান নেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তিন দিন ধরে তারা নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে।
এর আগে কলেজে ছাত্ররাজনীতির নিষিদ্ধের মধ্যেই গত ১ মার্চ কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব এবং সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কলেজে ছাত্রদলের ৫ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়।
জানা যায়, গত ১ মার্চ ফরিদপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সিভিল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. রাসেলকে সভাপতি ও একই বর্ষের শিক্ষার্থী মো. আব্দুল আউয়ালকে সাধারণ সম্পাদক করে ৫ সদস্যবিশিষ্ট ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির। কমিটিতে সিনিয়র সহসভাপতি ইব্রাহিম খলিল, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান আসিফ এবং সাংগঠনিক সম্পাদক এডিসন চাকমার নাম রয়েছেন। তারা প্রত্যেকেই সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী।
আগামী ৩০ দিনের মধ্যে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করে কেন্দ্রীয় দপ্তরে জমা দেওয়ার কথা বলা হয়।
কলেজ সূত্রে জানা যায়, সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের ২০ আগস্ট কলেজের একাডেমিক কাম-প্রশাসনিক কাউন্সিল সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক ক্যাম্পাসে সব ধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ করে নোটিশ জারি করেন তৎকালীন অধ্যক্ষ (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান। ওই নোটিশে বলা হয়, ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে কলেজের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সব ধরনের রাজনৈতিক সংগঠনের কার্যকলাপের সাথে সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হয়।
নিষিদ্ধের মধ্যে দিয়ে নতুন করে গত ১ মার্চ ছাত্রদলের কমিটি গঠনের খবর প্রকাশ হওয়ায় ক্ষোভে ফুঁসে ওঠেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
কমিটির ঘোষণার পর থেকেই নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে ক্যাম্পাসে নানা কর্মসূচি পালন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা।
কলেজের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী কাজী সুরাইয়া বলেন, তিন দিন আগে আমাদের ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের কমিটি কয়েকজন ছাত্র গঠন করেছেন। কমিটি ঘোষণার পর থেকে বহিরাগতরা এসে ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। ক্যাম্পাসে এসে তারা মোটরসাইকেল শোডাউনের সাথে মেয়েদের হলের সামনে আড্ডা দিচ্ছে। যদি ক্যাম্পাসে আবারো সেই রাজনীতি ঢুকে পড়ে তাহলে আমরা কেন ৫ আগস্ট করলাম? ক্যাম্পাসে কোনো ছাত্র রাজনীতি চলবে না।
কলেজ প্রশাসনকে উদ্দ্যেশ্যে করে ইলেকট্রিক্যাল বিভাগের শিক্ষার্থী নাজমুল হাসান বলেন, নিষিদ্ধের পরেও যারা কমিটি নিয়ে এসেছে তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। অবিলম্বে ছাত্রদলের কমিটিকে বিলুপ্ত ঘোষণা করে ক্যাম্পাসকে রাজনীতি মুক্ত করতে হবে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ছাত্রদলের কমিটিতে স্থান পাওয়া আতিকুর রহমান আসিফ বিগত দিনে ছাত্রলীগের প্রভাব খাটিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতন করেছিল। আজ সেই শিক্ষার্থীও ছাত্রদলের কমিটিতে স্থান পেয়েছে। আমরা ছাত্রলীগের পুনরাবৃত্তি আর দেখতে চাই না।
সদ্য ঘোষিত ফরিদপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি মো. রাসেল জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র নেতারা যখন রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন, তখন আমরা ছাত্ররা কেন রাজনীতি করতে পারব না? আমাদের ক্যাম্পাসের তিনজন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফরিদপুর জেলা শাখার কমিটিতে রয়েছে। তারা যেহেতু রাজনীতি শুরু করেছে শিক্ষার্থীরাও রাজনীতি করবে।
বহিরাগতদের নিয়ে মহড়ার কথা অস্বীকার করে তিনি বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসে যারা অবস্থান কর্মসূচি করছে তাদের অধিকাংশই ছাত্রলীগের দোসর। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কমিটির তিনজন এবং ছাত্র শিবির সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীল পরিরবেশ তৈরি করছে।
বিষয়টি জানতে কলেজের অধ্যক্ষ মো. আলমগীর হোসেনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করে পাওয়া যায়নি। অধ্যক্ষের প্রতিনিধি হিসেবে পরিচিত কলেজের প্রোগ্রামার রাকিবুল ইসলাম জানান, এ বিষয়ে জরুরিভাবে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলিংয়ের মিটিং হয়েছে। আমরা দুই পক্ষের সাথেই কথা বলে মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত নোটিসে জানিয়ে দেব।