Thursday, March 13, 2025

ভোল পালটে নতুন রূপে ‌‘ছাত্রলীগ’

আরও পড়ুন

রাজধানীসহ সারা দেশে ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও ডাকাতির মতো অপরাধ উদ্বেগজনক হারে বেড়ে গেছে। এর পেছনে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ অনেকাংশে দায়ী। নিষিদ্ধ ঘোষিত এ সংগঠনটির মাস্টারমাইন্ডরা পরিকল্পিতভাবে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পেশাদার অপরাধীদের নানা পন্থায় মাঠে নামাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে নিজেরাও যুক্ত হচ্ছে। এসব অপরাধ কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে হোয়াটসঅ্যাপ ও মেসেঞ্জারসহ বিভিন্ন অ্যাপস গ্রুপের মাধ্যমে। গোয়েন্দা সংস্থার অনুসন্ধানে সম্প্রতি চাঞ্চল্যকর এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

এদিকে এ চক্রের পুরো নেটওয়ার্ককে চিহ্নিত করতে জড়িতদের তালিকা প্রণয়নসহ পাঁচ ধরনের তথ্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশের উচ্চপর্যায় থেকে ইতোমধ্যে মাঠ পর্যায়ে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, মূলত পাঁচটি বিষয়ে খোঁজ নিতে বলা হয়েছে নির্দেশনায়। এর মধ্যে রয়েছে-নিষিদ্ধ সংগঠনটির নেতাকর্মীদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ, রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা, সামাজিক কার্যক্রম এবং সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে হালনাগাদ খবরাখবর রাখা। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এই নির্দেশনায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের পূর্ণ নাম ও পরিচয়, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, পাসপোর্ট নম্বর (যদি থাকে), রাজনৈতিক পরিচয় ও সংগঠনে অবস্থান, অতীত ও বর্তমান কার্যক্রমের বিবরণ, জিডি বা মামলা থাকলে তার তথ্য জরুরি ভিত্তিতে দিতে বলা হয়েছে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, হয়রানি বা মামলার জন্য নয়, নিষিদ্ধ এই সংগঠনটির নেতাকর্মীদের কার্যক্রম এবং গতিবিধি নজরদারিতে রাখতেই তালিকা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছেন তারা। তাদের দাবি, যে কোনো নিষিদ্ধ সংগঠনের জন্য এসব তথ্য প্রয়োজন। শুধু ছাত্রলীগ নয়, নিষিদ্ধ সব সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিষয়েও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার পক্ষ থেকে।

আরও পড়ুনঃ  জবির ছাত্রী হলে অবাঞ্ছিত ঘোষণা ছাত্রলীগ কর্মীদের

ছাত্র-জনতার নজিরবিহীন গণ-অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এর পর থেকেই মূল দল আওয়ামী লীগের পাশাপাশি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও আত্মগোপনে চলে যান। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ছাত্র সমাজের দাবির মুখে গত বছরের ২৩ অক্টোবর ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার।

গোয়েন্দা তথ্য বলছে, আত্মগোপনে থাকা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সংগঠিত হয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করছে। গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে কিছুদিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে। যে রকম সংঘাত-সহিংসতার আশঙ্কা করা হয়েছিল সেটি হয়নি। কিন্তু এক মাস ধরে হঠাৎ করেই সামাজিক অস্থিরতা বেড়ে গেছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছিনতাই, ডাকাতির মতো ঘটনা বেড়ে চলেছে। তবে এসব অপরাধের বেশির ভাগ পরিকল্পিত এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাত রয়েছে। এ অবস্থায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে আরও সতর্ক ও সক্রিয় হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, নিষিদ্ধ এই সংগঠনটির নেতাকর্মীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন বলেও মত দিয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।

একই অভিযোগ রয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকেও। তাদের মতে, নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের হাতে অবৈধ অস্ত্র ছাড়াও কালোটাকাও আছে। এ দুই শক্তিতে ভর করে নতুন করে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। এজন্য ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের গতিবিধি অনুসরণ করতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে জেলা পুলিশ সুপারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরপর আবার জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে থানায় থানায় চিঠি দিয়ে দ্রুত তাদের তালিকা সংগ্রহ করে সদর দপ্তরে পাঠাতে বলা হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তর বলেছে, ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন। আইন অনুযায়ী এদের সব কার্যক্রম শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাদের মতে, কোনো দমন-পীড়ন, হয়রানি বা মামলা করতে নয়; রাষ্ট্রের নিরাপত্তার স্বার্থে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের তথ্য-উপাত্ত যাচাই করা হচ্ছে। শুধু ছাত্রলীগই নয়, হিজবুত তাহরির, সশস্ত্র সর্বহারা পার্টিসহ নিষিদ্ধ ঘোষিত অন্যান্য দল এবং সংগঠনের বিষয়েও খোঁজখবর নিচ্ছেন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা।

আরও পড়ুনঃ  হল কক্ষের বাইরে ফেলে পুড়িয়ে দেওয়া হলো রাবি ছাত্রলীগ নেতাদের বিছানাপত্র

জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (মুখপাত্র) ইনামুল হক সাগর সোমবার যুগান্তরকে বলেন, মামলার আসামিদের খোঁজখবর রাখা মামলা তদারকির নিয়মিত অংশ। তবে ছাত্রলীগের তালিকার চিঠির বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপাররা বিস্তারিত বলতে পারবেন।

এ প্রসঙ্গে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ নুরল হুদা যুগান্তরকে বলেন, কেউ রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ হলে পুলিশ তার তালিকা করবে, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে-এটাই স্বাভাবিক। এটি বিশেষ কোনো দলের জন্য নয়, যে কোনো নিষিদ্ধ সংগঠনের জন্যই প্রযোজ্য।

আরও পড়ুনঃ  নতুন বছরে যেসব কাজ না করার প্রতিজ্ঞা করলো ছাত্রশিবির

অভিযোগ রয়েছে, এরই মধ্যে আত্মগোপনে থাকা সংগঠনটির নেতাকর্মীদের অনেকেই ভোল পালটাতে শুরু করেছেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং ছাত্র সংগঠনে আশ্রয় নেওয়ার পথ খুঁজছেন তারা। দলগুলোও আবার নিজেদের প্রভাব বলয় ও শক্তি বাড়াতে কাছে টানছেন নিষিদ্ধ ঘোষিত এই সংগঠনের নেতাকর্মীদের। এর বাইরে আত্মগোপনে থাকা সংগঠনটির অধিকাংশ নেতাকর্মী নানা উপায়ে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছেন বলে তথ্য মিলেছে। জানা গেছে, ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, ইমো, সিগন্যালসহ বিভিন্ন অ্যাপস ব্যবহার করে এরা সংগঠিত হওয়াসহ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। এছাড়া সমাজে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে তারা কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য, মাদকসেবীসহ চিহ্নিত অপরাধীদের কাজে লাগাচ্ছে। এদের ব্যবহার করে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধ সংঘটিত করাচ্ছে। এ জন্য প্রয়োজনমতো আর্থিক বিনিয়োগও করা হচ্ছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। কিছুদিন আগে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের একটি অডিও ভাইরাল হয়। ঢাকায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে বিদেশে পলাতক আওয়ামী লীগের এই নেতা নির্দেশ দেন। এজন্য যা যা করণীয় তিনি করবেন বলেও অডিও বার্তায় শোনা যায়। অডিও বার্তায় জাহাঙ্গীর আলমকে বলতে শোনা যায়, ‘যে শহরে আমাদের নেতাকর্মী দিনের বেলায় চলাচল করতে পারবে না, সে শহরে রাতে কেউ ঘুমাতে পারবে না।’ এ বক্তব্য শোনার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নড়েচড়ে বসে।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ