দীর্ঘ সময় পর গত ২ অক্টোবর মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফিরেন জনপ্রিয় ইসলামি বক্তা মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারী। ১০ দিন দেশে অবস্থানের পর আজ আবারও মালয়েশিয়া ফিরে যাচ্ছেন তিনি। শুক্রবার (১১ অক্টোবর) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে বিষয়টি নিশ্চিত করছেন।
দেশে খুব লম্বা সময় অবস্থান না করলেও শিগগিরই ফেরার কথা জানিয়েছেন এই বক্তা। মিজানুর রহমান তার স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘দীর্ঘ পাঁচ বছর পর সংক্ষিপ্ত সফরে দেশে এসেছিলাম। বেশীর ভাগ সময় পরিবারের সাথেই কাটিয়েছি। এরই মাঝে বিভিন্ন ঘরানার আলিম-ওলামা ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের নিয়ে একটি ক্লোজ মিট-আপ প্রোগ্রাম করেছিলাম।
আলহামদুলিল্লাহ, সত্যিই সে-দিনটি বেশ উপভোগ্য ছিল। তবে শর্ট নোটিশে প্রোগ্রামটি আয়োজনের কারণে অনেক প্রিয় ভাই আসতে পারেননি। আবার কিছুটা তাড়াহুড়ো করে দাওয়াত দেয়ার কারণে, বেখেয়ালবশত অনেকে বাদ পড়েছেন। আশাকরি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। পরবর্তীতে সবার সাথে সাক্ষাতের প্রত্যাশা রইলো।
আজ মালয়েশিয়া চলে যাচ্ছি। মাস খানেক পর আবারো দেশে ফিরবো ইনশাআল্লাহ। তখন আইনশৃঙ্খলা, জননিরাপত্তা, প্রটোকল, লোকেশন সিলেকশন, শ্রোতা ধারণ ক্ষমতা, অর্গানাইজিং ক্যাপাসিটি-সহ সবকিছু অনুকূল হলে, পুরো দেশ জুড়ে বিভাগীয় পর্যায়ে হয়তো কয়েকটি প্রোগ্রামে অংশগ্রহন করতে পারি। তবে সব কিছুই নির্ভর করবে উপযুক্ত পরিবেশ ও পরিস্থিতির উপর।
আমি এ-জমিনে কুরআনের আলো ছড়িয়ে দিতে চাই পরিকল্পিতভাবে। তাই আগের মতো জেলায় জেলায় গণহারে তাফসির প্রোগ্রাম করতে চাচ্ছিনা। আউটডোর প্রোগ্রাম সীমিত করে, কিছু ইনডোর প্রোগ্রামে অংশগ্রহন করতে চাই। পাবলিক ইভেন্ট ছাড়াও একাডেমিক এবং প্রাতিষ্ঠানিক কাজে যুক্ত হতে চাই। এসব স্বপ্ন বাস্তবায়নে আপনাদের সহযোগিতা প্রয়োজন। শীঘ্রই এসব প্রকল্পের ঘোষণা আসবে ইনশাআল্লাহ। দুআয় রাখবেন।’
উল্লেখ্য, ২০২০ সালে আজহারী মালয়েশিয়া চলে যাওয়ার ঘোষণা দেয়ার পর তাকে নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা হয়েছিল। সে বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি ফেসবুক পেজে এক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘পারিপার্শ্বিক কিছু কারণে এখানেই এবছরের তাফসির প্রোগ্রামের ইতি টানতে হচ্ছে। তাই, মার্চ পর্যন্ত আমার বাকি প্রোগ্রামগুলো স্থগিত করা হল। রিসার্চের কাজে আবারও মালয়েশিয়া ফিরে যাচ্ছি। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সুযোগ করে দিলে আবারও দেখা হবে ও কথা হবে ইনশাআল্লাহ।’
তিনি গবেষণার কাজে মালয়েশিয়া গেছেন বলে ওই পোস্টে উল্লেখ করলেও হঠাৎ চলে যাওয়ায় প্রশ্ন উঠেছিল নানা মহলে। এর কারণ হিসেবে তখন বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলা হয়, ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে লক্ষ্মীপুরে তার এক মাহফিলে ১২ জন ভারতীয় নাগরিকের ধর্মান্তরের ঘটনা আলোচনার সৃষ্টি করে। লক্ষীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার পানপাড়া গ্রামে আজহারীর মাহফিলে একই পরিবারের মোট ১২ জন সদস্য এক সঙ্গে ইসলাম গ্রহণ করা আলোচিত এই হিন্দু পরিবারটি এসেছিল ভারত থেকে। বাংলাদেশ পুলিশ ১২ জনকেই আটক করে ভারতে ফেরত পাঠায়।
অপরদিকে ব্যাপক জনপ্রিয়তা ও লোকসমাগমের কারণে বিভিন্ন জায়গায় তাকে ওয়াজ-মাহফিল করতে বাধা দেয়া হয়েছিল বলেও অভিযোগ ওঠে। তৎকালীন সরকারের ধর্ম প্রতিমন্ত্রী আজহারীকে জামায়াত-সংশ্লিষ্ট বলে অভিযোগ তোলেন; যা নিয়ে তখন ব্যাপক হইচই হয়েছিল। সব মিলিয়ে অনেকে ধারণা করেছিলেন, নিরাপত্তাজনিত কারণে মিজানুর রহমান আজহারী দেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন।