Friday, March 14, 2025

আন্দোলনের পক্ষে শিক্ষকদের দেওয়া পোস্টের স্ক্রিনশট উপাচার্যের গোপন কক্ষে

আরও পড়ুন

বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেফমুবিপ্রবি) উপাচার্যের গোপন কক্ষ থেকে শিক্ষকদের ফেসবুক পোস্টের প্রিন্ট করা স্ক্রিনশটের একটি খাম পাওয়া গেছে। স্ক্রিনশটগুলোতে শিক্ষকরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে পোস্ট ও মন্তব্য করেছিলেন, সেগুলো হাইলাইট করা রয়েছে।

গত জুলাই মাসে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারকে কেন্দ্র করে শুরু হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এতে শত শত ছাত্র-জনতা নিহত হতে থাকলে তা রূপ নেয় সরকার পতনের গণঅভ্যুত্থানে। এ আন্দোলনের পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মতো বশেফমুবিপ্রবিতেও কিছু শিক্ষক এ আন্দোলনের পক্ষে ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন। নজরদারি বা ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্দেশে সংগৃহীত এসব শিক্ষকদের পোস্ট ও মন্তব্যের স্ক্রিনশট দেওয়া ফটোকপি উপাচার্যের গোপন কক্ষে পাওয়া গেছে।

খামে ভর্তি দশ পাতার প্রিন্ট করা পোস্ট ও কমেন্টের বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, কিছু শিক্ষক ও ট্রেজারের নাম হাইলাইটার দিয়ে মার্ক করা রয়েছে। এতে কিছু শিক্ষার্থীর কমেন্টও দেখা যায়। সেখানে থাকা অধিকাংশ পোস্ট ও কমেন্টগুলোর স্ক্রিনশট নেওয়া হয়েছে পোস্ট করার একদিন পরে। কিছু কিছু কমেন্ট ও পোস্ট দেখা যাচ্ছে ১৯ ঘণ্টা ও ১৭ ঘণ্টা আগে পোস্ট করা হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  রাতে মাদরাসায় দুই ছাত্রীকে অফিসে ডেকে দরজা বন্ধ করেন অধ্যক্ষ

স্ক্রিনশটগুলোতে দেখা যায়, বেশিরভাগ পোস্ট করা হয়েছে ৩ আগস্ট বা তারও আগে। এদিকে সরকারের পতন হয় ৫ আগস্ট। খামভর্তি প্রিন্ট করা স্ক্রিনশটগুলো ৪ আগস্ট নেওয়া হয়েছে এবং উপাচার্যের কক্ষে জমা দেওয়া হয়েছে। কেননা, ৫ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকে এবং এই দিনে সরকার পতন হওয়ার পর থেকে উপাচার্যের কক্ষ তালাবদ্ধ থাকে আর্থিক, প্রশাসনিক ও একাডেমিক দায়িত্বে নিয়োগ হওয়ার আগ পর্যন্ত।

খামে থাকা পোস্টগুলোর স্ক্রিনশট সবচেয়ে বেশি রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মো. সাইফুল ইসলামের। তিনি বর্তমানে আর্থিক, প্রশাসনিক ও একাডেমিক দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি একটি পোস্টে লিখেছেন, ‘আমার ছাত্র মরল কেন? জবাব চাই, বিচার চাই…’। হাত উঁচু করে লাল কার্ড দেখানো একটি ছবি জুড়ে দেওয়ার আরেকটি পোস্টে তিনি লেখেন, ‘ছাত্র-জনতা মুক্তি পাক, খুনিরা সব নিপাত যাক।’ এ ছাড়াও অন্য পোস্টগুলোতেও আন্দোলনের পক্ষে তার স্পষ্ট অবস্থান ফুটে ওঠে।

অন্যদিকে, সহকারী অধ্যাপক সৈয়দ আরিফুল হকের বেশ কয়েকটি পোস্টও প্রিন্ট করা স্ক্রিনশটের মধ্যে রয়েছে। তার পোস্টগুলোর মধ্যে একটি পোস্টে কোরআনের আয়াত এবং আরেকটিতে শহীদ আবু সাঈদের মৃত্যুর শোক প্রকাশ করে লেখেন, ‘আমরা শিক্ষকরা, যারা ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে অভিভাবক হিসেবে পরিচিত সে শিক্ষকরাই যখন নিজ ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ, সে আবার কিসের অভিভাবক। এ লজ্জা আমাদের, মেরুদণ্ডহীন শিক্ষকদের। আমি শিক্ষক হিসেবে বাকরুদ্ধ, লজ্জিত,ব্যথিত।’

আরও পড়ুনঃ  সাতক্ষীরায় মুখোমুখি অবস্থানে আওয়ামী লীগ-বিএনপি, চলছে প্রার্থীদের লড়াই

স্ক্রিনশটগুলোতে ট্রেজারার মোহাম্মদ আব্দুল মান্নানের দুটি ও সমাজ কর্ম বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আল মামুন সরকারের একটি মন্তব্য রয়েছে। সেখানে তাদের নামও মার্ক করা রয়েছে।

এ ছাড়াও দশ পাতার প্রিন্ট করা ওসব স্ক্রিনশটে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী শাকিল আহমেদ, বর্তমান শিক্ষার্থী তাবাসসুম রাফি ও মামুনুর রশিদসহ আরও বেশ কয়েকজনের কমেন্ট দেখা যায়।

কীভাবে উপাচার্যের কক্ষে পাওয়া গেল এই স্ক্রিনশটের খাম তা অনুসন্ধান করতে গিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানান, সরকার যে কোনো সময় উপাচার্য নিয়োগ দিতে পারে। তাই কক্ষটি তার ব্যবহারের উপযোগী করতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়। একইসঙ্গে সদ্য পদত্যাগ করা উপাচার্যের ব্যক্তিগত কিছু জিনিসপত্র ছিল, তা গোছাতে গিয়ে তার খাস কামরায় কয়েকটি খাম পাওয়া যায়। এর বেশিরভাগই নষ্ট কাগজপত্র। সেখানে পাওয়া একটি খাম খুললে দেখা যায়, একজন শিক্ষকের ফেসবুক পোস্ট ও কমেন্টের স্ক্রিনশট প্রিন্ট করে মার্কার দিয়ে মার্ক করা। তখন বিষয়টি অফিসের ঊর্ধ্বতনদের জানানো হয়।

আরও পড়ুনঃ  পদ্মা ব্যাংকের এমডির পদত্যাগ, চার ব্যাংকে আসছে নতুন মুখ

এ বিষয় বিস্তারিত জানতে সদ্য পদত্যাগ করা উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. কামরুল আলম খানকে ফোন করা হলে তিনি ব্যস্ততা দেখিয়ে কল কেটে দেন।

বর্তমানে আর্থিক, প্রশাসনিক ও একাডেমিক দায়িত্ব প্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, গত ৮ অক্টোবর উপাচার্যের কক্ষ পরিষ্কার করার সময় একটি খাম পাওয়া যায়। খামটিতে জুলাই-আগস্ট মাসে শিক্ষকদের আন্দোলন নিয়ে করা কয়েকটি পোস্টের স্ক্রিনশট ছিল, যেখানে শিক্ষকদের নাম হাইলাইট করা। এই ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসার প্রকাশ। ছাত্রদের পক্ষে অবস্থান নেওয়া স্বাভাবিক, কারণ এটি মত প্রকাশের অধিকার।

স্ক্রিনশটগুলোর মধ্যে আরেক শিক্ষক, সহকারী অধ্যাপক সৈয়দ আরিফুল হকের পোস্টও ছিল। বর্তমানে পিএইচডি করতে ওমানে অবস্থানরত থকায় মুঠোফোনে তিনি জানান, শিক্ষার্থীদের পক্ষে কথা বললে সেটি কোট করে উপাচার্যের কক্ষে দেওয়া হলে, তা অত্যন্ত লজ্জাজনক। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচার দাবি করেন।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ