Thursday, March 13, 2025

চবি’র সেই শিক্ষক রন্টু দাশের পদত্যাগ

আরও পড়ুন

জোড়া খুনের আসামি হয়েও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন ছাত্রলীগ নেতা রন্টু দাশ। এমনকি উচ্চ মাধ্যমিকে মাত্র ২.৯ পয়েন্ট পাওয়ার পরও রাজনৈতিক কোটায় তাকে শিক্ষক বানানো হয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে সে সময় বেশ সমালোচনা হলেও পাত্তাই দেননি তৎকালীন প্রশাসন। তবে শেষ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে চাকরি থেকে অব্যাহতি নিলেন ছাত্রলীগের সাবেক এই অস্ত্রধারী ক্যাডার। গতকাল দুপুরে নিজের সিল ও স্বাক্ষর সম্বলিত ইতিহাস বিভাগের একটি প্যাডে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর পদত্যাগপত্র জমা দেন রন্টু দাশ।

পদত্যাগপত্রে তিনি লিখেন, আমি নিম্নস্বাক্ষরকারী স্বেচ্ছায় ইতিহাস বিভাগের শিক্ষকের পদ থেকে পদত্যাগ করছি। এ বিষয়ে আপনাকে অবগত করছি। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি দুপুরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিবির ও ছাত্রলীগের মধ্যে সংঘর্ষে দু’শিবির কর্মী নিহত হন। তারা হলেন- চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মো. মুজাহিদুল ইসলাম মুজাহিদ ও ইংরেজি চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মাসুদ বিন হাবিব। তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা রন্টু দাশ, পীযুষ কান্তি বর্মণ, আবুল মনসুর শিকদার, জালাল আহমেদসহ পদধারী ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা সেই হত্যাকাণ্ডে নেতৃত্ব দেন। সেই ঘটনায় শিবিরকর্মী মুজাহিদের বাবা মো. হুমায়ন কবির মিন্টু বাদী হয়ে চট্টগ্রামের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইয়াসমিন আরার আদালতে ছাত্রলীগের ৪২ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করেছিলেন। এ মামলার অন্যতম আসামি ছিলেন ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রন্টু দাশ। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে এ বিষয়ে তদন্ত করে ২০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য হাটহাজারী থানার তৎকালীন ওসিকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু তৎকালীন আওয়ামী প্রশাসনের কারণে ওই মামলাটি আর গতি পায়নি। আর সে মামলার আসামি রন্টু দাশকেই পরে বিশেষ বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক করা হয়।

আরও পড়ুনঃ  কোটা সংস্কার আন্দোলনে যোগ দিয়ে ছাত্রলীগ নেতার পদত্যাগ

জানা যায়, ২০১২ সালের ২রা ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তি অনুসারে গ্রেডিং পদ্ধতিতে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের এসএসসি বা সমমান ও এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষার উভয়টিতে ন্যূনতম জিপিএ-৩.০ পয়েন্ট এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে পৃথকভাবে ৩.৫ থাকতে হবে। কিন্তু এইচএসসিতে ২.৯ পয়েন্ট পেয়েও সে সময় ওই পদে নিয়োগ পেয়েছিলেন রন্টু। বিভাগের প্ল্যানিং কমিটি এর প্রতিবাদ করলেও প্রভাবশালী এক শিক্ষকের চাপে আবেদনপত্রটি গৃহীত হয়। তৎকালীন শিবির নেতা রাজিফুল হাসান বাপ্পি বলেন, ২০১৪ সালের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন রন্টু দাশকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়ে এক কলঙ্কজনক অধ্যায় রচনা করেছিল। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে ইতিপূর্বে ঘটেনি। অনেক মেধাবী ও সর্বোচ্চ সিজিপিএ পাওয়া প্রার্থীরা প্রভাষক পদে আবেদন করলেও প্রশাসন ও আওয়ামী লীগের নগ্ন থাবায় সেদিন শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল করে খুনি রন্টু দাশকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন প্রশাসন। ফলে বঞ্চিত হয়েছিল প্রকৃত মেধাবীরা। রন্টু দাশের সবচেয়ে বড় যোগ্যতা হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছিল সে দু’জন মেধাবী ছাত্রকে কুপিয়ে হত্যার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। ডাবল মার্ডারের খুনি হিসেবেই তার যোগ্যতা নির্ধারণ করে তাকে সে সময় নিয়োগ দেয়া হয়েছিল।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ