বগুড়ায় আওয়ামী লীগ পার্টি অফিসের লাগোয়া অবস্থান ছিল বগুড়া টাউন ক্লাবের। ক্রীড়াঙ্গনের আঁতুড়ঘর খ্যাত টাউন ক্লাবটি ভেঙে গুঁড়িয়ে ফেলেছেন বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা।
গত বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বিক্ষুপ্ত ছাত্র-জনতা, রাতে আওয়ামী লীগ পাটি অফিস ভাঙচুরের সময় লাগোয়া বগুড়ার ঐতিহ্য টাউন ক্লাবটিও ভেঙে ফেলেন। ক্লাবটি ভাঙার সময় বিক্ষুব্ধ জনতা ‘দিল্লি না ঢাকা; ঢাকা ঢাকা’, ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ শেষ হয়নি যুদ্ধ;’- সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে।
বগুড়া শহরের এক সময়ের স্বনামধন্য খেলোয়াড় শাহাজানা আলী বলেন, ঐতিহাসিক টাউন ক্লাব বগুড়ার মানুষের কাছে অমূল্য সম্পদ। এখানে অনেক খেলোয়াড়ের স্মৃতি রয়েছে। হঠাৎ বিক্ষুব্ধ জনতা এটা ভেঙে ফেলল।
তিনি আরও বলেন, এটা যারা ভেঙেছে তারা এর ইতিহাস এতিহ্য সম্পর্কে কিছু জানেন না। জানলে এমন কাজ করতেন না। বগুড়ার নির্মহ ইহিতাসের সাক্ষী টাউন ক্লাব ভাঙা ঠিক হয়নি।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিক্ষুদ্ধ জনতা মিছিল নিয়ে প্রথমে বগুড়ার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রবেশ করে। তারা ১২তলা ভবনের নিচে শেখ হাসিনার নামফলক হাতুড়ি দিয়ে ভেঙে ফেলে। পরে রাত ৮ টার দিকে শহরের সাতমাথা সংলগ্ন টেম্পল রোডে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগ অফিসে ভাঙচুর করে। এ সময় হাতুড়ি দিয়ে ভাঙচুর শেষে অফিসের অবশিষ্ট কিছু আসবাবপত্রে আগুন ধরিয়ে দেয়। এরপরে ক্রমান্বয়ে জাসদ, জাতীয় পার্টির অফিস ভাঙচুর শেষে রাত আনুমানিক ১০টার সময় বুলডোজার নিয়ে এসে এবং বগুড়া টাউন ক্লাবসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি দোকান গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।
জানা যায়, ১৮৯৩ সালে বগুড়ায় টাউন ক্লাব প্রতিষ্ঠা করা হয়। খেলাধুলা নিয়ে বগুড়ায় প্রথম গড়ে ওঠে টাউন ক্লাব। এই ক্লাব অনেকবার কুচবিহারের মহারাজা টুর্নামেন্টে বিজয়ী হয়ে সুনাম কুড়িয়েছে। এছাড়া প্রথম বিভাগ ক্লাব ও জাতীয় টিমের হয়ে এই ক্লাবের অনেক খেলোয়াড় খেলেছেন।
বগুড়ার সাবেক একাধিক ক্রীড়া সংগঠক জানান, এই ক্লাবটি কার্যত অরাজনৈতিক সংগঠন। জেলা ক্রীড়া সংস্থায় নিবন্ধিত এই ক্লাবে ফুটবল, ক্রিকেট ও কাবাডির আলাদা দল আছে। ঐতিহ্য বহনকারী এই ক্লাব ছিল বগুড়ার তথা দেশের, বিদেশের কাছে একটি পরিচিত নাম। গৌরবগাঁথা ক্লাব কেন ভাঙা হলো তা জানা নেই তাদের। ক্লাবটির জায়গা যেন বেহাত না হয় এবং নতুন করে যেন নির্মাণ করা হয়- প্রশাসনের কাছে সে দাবি জানান তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্র নেতা জানান, দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের দখলে থাকা এই স্থাপনার গুরুত্ব ছাত্র জনতা ভুলে গেছেন। ছাত্র-জনতার ক্ষোভের মুখে বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে ফেলা এই স্থানগুলো প্রায় দেড় যুগ ধরে আওয়ামী লীগ ব্যবহার করে আসছিল। আমরা এর সঠিক ইতিহাস জানলে হইতো এটি রক্ষা করা যেত।