সকল হত্যাকাণ্ড, গুম ও খুনের বিচার হবে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘বিচার তাৎক্ষণিকভাবে করতে গেলে অবিচার হয়ে যায়। বিচারের মূল জিনিসটা হলো এটা সুবিচার হতে হবে। অবিচার যেন না হয়। আমরা অবিচারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলাম বলেই এই সংগ্রাম হয়েছে, এই আত্মত্যাগ হয়েছে। আমরা যদি অবিচারে নামি তাহলে তাদের আর আমাদের মধ্যে তফাৎটা থাকলো কোথায়। আমরা অবিচারে নামবো না। যারা অপরাধী তাদের পুলিশের হাতে, আইনের হাতে সোপর্দ করবো। যারা অপরাধী নয়, পুলিশের হাতে দেয়ার মতো নেই তাদের মানুষ করবো।’
সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর তেজগাঁওস্থ প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে ২১টি জুলাই শহীদ পরিবার ও ৭ জন আহতের মধ্যে আর্থিক চেক হস্তান্তর কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সবসময় ভাবি যাদের কারণে, যাদের ত্যাগের বিনিময়ে দেশটাকে আমরা নতুন বাংলাদেশ বলার সাহস করছি তাদের এই ত্যাগ কোনো নিক্তি দিয়ে মাপা যায় না।’
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত ও শহীদের ইতিহাসের স্রষ্টা হিসেবে আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, ‘আপনারা জীবন্ত ইতিহাস। মনের গভীর থেকে আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। যে জাতি ইতিহাসকে স্মরণ করতে পারে না সে জাতি, জাতি হিসেবে গড়ে ওঠে না।’
শহীদ পরিবার ও আহতের উদ্দেশে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আজ থেকে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারের অংশ হলেন। এটা হলো প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি। এর বাইরেও আপনাদের দায়িত্ব রয়েছে, সেটা হলো সমাজের সবাইকে গ্রহণ করতে হবে। এ দেশ আমরা একসঙ্গে গড়ি, যে দেশ আমরা একসঙ্গে গড়ার স্বপ্ন দেখছি, তোমরাও সেই স্বপ্ন দেখ। এ দেশ আমার একার না, তোমারও এদেশ। তুমি এ দেশের সন্তান। আমিও এ দেশের সন্তান। তুমি আমাকে বহু কষ্ট দিয়েছ। আমি তোমাকে কষ্ট দেব না। আমরা এক যোগে যত তাড়াতাড়ি পারি এটাকে একটা সুন্দর দেশ বানাবো। যারা অপরাধী তাদের অবশ্যই বিচার করতে হবে। যারা অপরাধী নয়, তাদের সৎ পথে নিয়ে আসতে হবে।’
এ সময় তিনি জুলাই শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের আহ্বান জানান, দেশে কোনো সহিংসতা ও হানাহানি যেন না হয় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখেন।
এতে আরও উপস্থিত ছিলেন-মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম, তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ডা. মো. সায়েদুর রহমান।
বৈঠকে তিনটি শহীদ পরিবার ও তিনজন যোদ্ধা বক্তব্য রাখেন। তারা হত্যাকাণ্ডের বিচার, রাষ্ট্রীয় সম্মাননা প্রাপ্তি, আর্থিক সহযোগিতা ও পুনর্বাসনসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন। জুলাইয়ের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে এ সময় তারা কান্নায় ভেঙে পড়েন।