শিক্ষার্থীরা অবরুদ্ধ করার পর অধ্যক্ষ সাদা কাগজে লিখলেন– ‘পদত্যাগ করলাম’। এর পর কাগজে দিলেন নিজের সিল। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা এর পর হলেন শান্ত। অথচ এর আগে প্রায় ৩ ঘণ্টা তাদের মিছিল-সমাবেশে ক্যাম্পাস ছিল অস্থির। গতকাল বৃহস্পতিবার এ ঘটনা ঘটেছে বরিশালের বাকেরগঞ্জ সরকারি কলেজে।
এদিন কলেজের অধ্যক্ষ শুক্লা রানী হালদারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ তুলে একদল শিক্ষার্থী তাঁকে অবরুদ্ধ করে রাখে। দুপুর ২টার দিকে তিনি ‘পদত্যাগ করলাম’ লিখে মুক্ত হন। ১৪তম বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার শুক্লা রানী ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক। দুই বছর আগে তিনি সরকারি বাকেরগঞ্জ কলেজে যোগ দেন। এর আগে ছিলেন বরিশাল নগরের বিএম কলেজে।
স্থানীয়রা জানান, দেশের পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একদল শিক্ষার্থী অধ্যক্ষের পদত্যাগ দাবিতে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ শুরু করে। তবে কলেজের শিক্ষার্থীর চেয়ে বহিরাগত তরুণদের উপস্থিতি বেশি ছিল।
অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগের উল্লেখযোগ্য হলো– সপ্তাহে এক-দু’দিন কলেজে আসা, দুই বছরে ১০-১২ লাখ টাকা আত্মসাৎ, একটি ওভেন বাসায় নিয়ে যাওয়া, ম্যাগাজিনের নামে ৭৫ হাজার টাকা এবং ফুলবাগান করার নামে দুই বছরে ৮০ হাজার টাকা আত্মসাৎ।
আন্দোলনকারী কেএম হাসিবুল ইসলাম তুরান রাজধানীর ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী দাবি করে বলেন, তাঁর বাড়ি বাকেরগঞ্জের আউলিয়াপুরে। আগে এই কলেজের ছাত্র ছিলেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় নেতৃত্বে দেওয়ার পর বাকেরগঞ্জ উপজেলাকে দুর্নীতিমুক্ত করতে চান। তাই কলেজ অধ্যক্ষের পদত্যাগের আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন।
কাগজে দুটি শব্দ লিখলেই একজন বিসিএস কর্মকর্তার পদত্যাগ কার্যকর হয় কিনা জানতে চাইলে তুরান বলেন, এগুলো আমাদের জানা নেই। তাহলে এখন আমাদের কী করতে হবে? তবে পদত্যাগ হোক বা না হোক, তাঁকে আর কলেজে ঢুকতে দেওয়া হবে না।
অধ্যক্ষ শুক্লা সমকালকে বলেন, যাদের পড়িয়েছি, তাদের কয়েকজন আমাকে চরম অপমান করেছে। তবে শিক্ষার্থীর চেয়ে এখানে বহিরাগত বেশি ছিল। কোনোভাবে ওদের শান্ত করতে না পেরে ‘পদত্যাগ করলাম’ লিখে দিয়েছি। এখন পুরো বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব। অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, একটি অভিযোগেরও সুনির্দিষ্ট প্রমাণ নেই। কলেজের শিক্ষকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে। তাদের একটি পক্ষ শিক্ষার্থী ও বহিরাগতদের ব্যবহার করেছে।
স্থানীয় কয়েকজন জানান, কলেজ মসজিদের ইমাম মাওলানা আলতাফকে কয়েক বছর আগে অপসারণ করে আরেকজনকে নিয়োগ দেন উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতারা। সরকার পতনের পর আলতাফকে পুনর্বহাল করতে সক্রিয় হয় স্থানীয় বিএনপির একটি পক্ষ। তাদের ইন্ধনেই অধ্যক্ষবিরোধী আন্দোলনটি হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, আমিও শুনেছি, অধ্যক্ষের কাছ থেকে ‘পদত্যাগ করলাম’ লেখা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এভাবে তো পদত্যাগ হয় না। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে। জেলা প্রশাসককে সব জানিয়েছি।