সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি ছবি সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, শেখ হাসিনা খাবার টেবিলে বসে আছেন, আর একজন নারী তাকে খাবার পরিবেশন করছেন। সামনে সাজানো আছে অনেক খাবার।
‘ছবিটি গতকালের’ এইধরণের ক্যাপশন দিয়ে ছবিটি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
নেটিজনদের অনেকে এটি শেয়ার দিয়ে বোঝাতে চাচ্ছেন যে, ভারতে শেখ হাসিনাকে আপ্যায়ন করা হচ্ছে। তবে প্রশ্ন উঠেছে ছবিটি কবেকার এবং কোথাকার?
বিভিন্ন ফ্যাক্টচেকিং টুলস এবং সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করে জানা গেছে, ছবিটি ২০১৯ সালের ১৫ মার্চের। সেদিন মির্জাপুরে কুমুদিনী কমপ্লেক্সের ভারতেশ্বরী হোমসে শহীদ দানবীর রনদা প্রসাদ সাহা স্মারক সম্মাননা ও পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে তার জন্য ৩১ পদের বাঙ্গালি খাবারের আয়োজন করেছিলেন কুমুদিনী পরিবার। কাঁসার থালায় খাবার ও কাঁসার গ্লাসে পানি পান করেছিলেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন তার ছোট বোন শেখ রেহেনাও।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। তারপর থেকে তিনি সেখানে অবস্থান করছেন। প্রাথমিকভাবে তিনি অল্প সময়ের জন্য ভারতে থাকবেন বলে আশা করা হলেও এখন শোনা যাচ্ছে তার যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে আশ্রয় নেয়ার প্রচেষ্টা এখনো পর্যন্ত সফল হয়নি। ভারতে হাসিনার অব্যাহত উপস্থিতি অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে একটি শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে দিল্লির জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।
গত ৬ আগস্ট ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমদ পলক ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ গ্রেপ্তার হন- এমন গুজব ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। পরে পলককে গ্রেপ্তার দেখানো হলেও হাছান মাহমুদ ছিলেন নিখোঁজ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, হাছান মাহমুদ এখন বেলজিয়ামের লিমবুর্গ প্রদেশের হ্যাসেল্ট সিটিতে তাঁর নিজের বাড়িতেই আছেন একমাত্র ছেলে আর স্ত্রী নুরান ফাতেমাকে নিয়ে।
হাছান মাহমুদের পরিবারের দখলে কয়েক শ একর খাস জমিহাছান মাহমুদের পরিবারের দখলে কয়েক শ একর খাস জমি
জানা গেছে, হাছান মাহমুদ ঢাকা থেকে সরাসরি বেলজিয়াম যাননি। এমিরাতের ফ্লাইটে তিনি দুবাই হয়ে প্রথম জার্মানির ডসেলড্রপ বিমানবন্দরে যান গত ২৬ আগস্ট বিকেল পৌনে ৩টায়। সেখান থেকে সড়কপথে গাড়ি চালিয়ে তাঁকে বেলজিয়ামের বাড়িতে পৌঁছে দেন জার্মান শাখার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোবারক আলী ভূঁইয়া বকুল।
এ বিষয়ে মোবারক আলী ভূঁইয়া বকুল বলেন, ‘তিনি এইখানে আছেন এবং সেভ আছেন, এইটুকু আরকি। আর পরশুদিন আমাদের বেলজিয়ামে একটা মিটিং ছিল ওইখানে উনি উপস্থিত থাকতে পারবেন না সেটি আগেই বলে দিয়েছেন। উনি এখানে কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতেছেন না, কারো সঙ্গেই তার যোগাযোগ নাই।’
হাছান মাহমুদ বেলজিয়াম থেকে যাদের সঙ্গে ফোনকলে কথা বলেছেন তাদের একজন চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষার আইপিটিভি সি প্লাসের প্রধান সম্পাদক আলমগীর অপু। তার সঙ্গে গত ৩১ আগস্ট রাত ১০টা ২৭ মিনিটে টানা ১৫ মিনিট কথা বলেন সাবেক এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এইসময় নিজের আক্রোশ থেকে কিছুদিন সি-প্লাস এর সম্প্রচার বন্ধ রাখার জন্য দুঃখ প্রকাশও করেন বলে জানান অপু।
সিপ্লাস টিভি প্রধান সম্পাদক ও সিইও আলমগীর অপু বলেন, ‘৩১ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টার দিকে তিনি আমাকে কল দিয়েছিলেন। কল দিয়ে…উনি হয়ত উনার ভুল বুঝতে পেরেছেন এবং বুঝতে পেরে উনি আমাকে কল করে অনেকগুলো কথার ভেতরে উনি বারবার দুঃখ প্রকাশ করেছেন। এটার জন্য উনি লজ্জিত।’
স্ত্রী পরিবারের সঙ্গে বেলজিয়ামের নিজ বাড়িতে আছেন বলেও অপুকে জানান হাছান মাহমুদ।
দেশ ছাড়লেও সরকার পতনের পর হাছান মাহমুদের বিরুদ্ধে ঢাকা-চট্টগ্রামে অনেকগুলো হত্যা মামলা হয়েছে। সরকারি এত নজরদারির পরও কীভাবে তিনি বেলজিয়াম গেলেন সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।