Thursday, March 13, 2025

ইসরায়েলি হামলায় গাজাবাসীর জীবন্ত দগ্ধ হওয়ার ছবি ‘ভয়ঙ্কর’

আরও পড়ুন

ইসরায়েলি হামলার পর ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডের ফিলিস্তিনিদের জীবন্ত দগ্ধ হওয়ার ছবিকে ‘ভয়ঙ্কর’ বলে আখ্যা দিয়েছে হোয়াইট হাউস। এ বিষয়ে ইসরায়েলের কাছে নিজেদের উদ্বেগও পরিষ্কার করে জানিয়ে দিয়েছে মার্কিন সরকার।

মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলার পর বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের জীবন্ত পুড়িয়ে ফেলার মতো ভয়াবহ ভিডিও এবং ছবিগুলো ‘ভয়ঙ্কর’ এবং ‘গভীর বিরক্তিকর’ বলে সোমবার হোয়াইট হাউস জানিয়েছে।

ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের একজন মুখপাত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে আনাদোলুকে বলেছেন, হোয়াইট হাউস এসব গ্রাফিক ইমেজ দেখার পর ‘ইসরায়েল সরকারের কাছে আমাদের উদ্বেগগুলো পরিষ্কার করেছে’।

ওই মুখপাত্র বলেছেন, “বেসামরিক হতাহতের ঘটনা এড়াতে ইসরায়েলের আরও কিছু দায়িত্ব রয়েছে এবং এখানে যা ঘটেছে তা ভয়ঙ্কর, এমনকি হামাস বেসামরিকদের মানব ঢাল হিসাবে ব্যবহার করার চেষ্টায় হাসপাতালের কাছে কার্যক্রম চালাচ্ছে বলে অভিযোগ থাকলেও।”

আরও পড়ুনঃ  যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনপন্থীদের ওপর ইসরায়েলপন্থীদের হামলা

গত রোববার রাতে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানগুলো মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহ শহরের আল-আকসা শহীদ হাসপাতালের আঙিনায় হামলা চালায়। এতে সেখানে চারজন নিহত এবং আরও ৪০ জন আহত হন। বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা ঘুমিয়ে থাকার সময় এই হামলার ঘটনা ঘটে এবং এতে বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয়স্থল হয়ে ওঠা কয়েক ডজন তাঁবু পুড়ে যায়।

হামলার পর মেডিকেল টিম নারী ও শিশুসহ বেশ কয়েকজন আহত ব্যক্তিকে সরিয়ে নিতে সক্ষম হয়, যাদের কাপড় হামলা ও বিস্ফোরণের জেরে পুড়ে গিয়েছিল।

ভয়াবহ এই হামলায় হতাহতরা গুরুতরভাবে দগ্ধ হয়, এমনকি কিছু লাশ এমনভাবে পুড়ে যায় যেগুলোকে শনাক্ত করার মতো ছিল না। প্রত্যক্ষদর্শীরা আনাদোলুকে জানিয়েছেন, আহতদের অধিকাংশই গুরুতরভাবে দগ্ধ হয়েছেন। তাঁবুতে ব্যবহৃত দাহ্য নাইলন ও কাপড়ের সামগ্রীর কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে বলেও জানান তারা।

আরও পড়ুনঃ  রাশিয়াকে নিয়ে জয়শঙ্করের মন্তব্য কী ভারতের ভীতির প্রতিফলন?

গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস থেকে দেওয়া লিখিত বিবৃতি অনুযায়ী, আল-আকসা শহীদ হাসপাতালে বাস্তুচ্যুত বেসামরিক নাগরিকদের তাঁবু লক্ষ্য করে এটি ছিল ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সপ্তম হামলা। ইসরায়েল এর আগে চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি, ১৩ মার্চ, ২২ জুলাই, ৪ আগস্ট এবং ২৭ সেপ্টেম্বর এই স্থানে তাঁবুতে বোমা হামলা করেছিল।

উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।

গাজা স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের মতে, গাজায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৪২ হাজার ৩০০ জন লোক নিহত হয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এছাড়া ৯৮ হাজার ৪০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন।

আরও পড়ুনঃ  ইরানের পর সিরিয়া ও ইরাকে সিরিজ বিস্ফোরণ

ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ মনে করছে, গাজা উপত্যকা জুড়ে ধ্বংস হওয়া বাড়ির ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও ১০ হাজারেরও বেশি লোক নিখোঁজ রয়েছেন। মূলত গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব সত্ত্বেও ইসরায়েল অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে তার নৃশংস আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে।

আন্তর্জাতিক সহায়তা প্রবেশের উপর ইসরায়েলের চলমান নিষেধাজ্ঞার মধ্যে গাজার প্রায় সমস্ত জনসংখ্যা যুদ্ধের কারণে বাস্তুচ্যুত হয়েছে যার ফলে খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে প্রায় ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। এছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরায়েল ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ