নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে পাইকারি আড়তের দখল নিয়ে মঙ্গলবার দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ © সংগৃহীত
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে একটি পাইকারি আড়তের দখল নিয়ে ছাত্রদল-স্বেচ্ছাসেবক দলের দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এসময় গুলিবর্ষণ ও ১১টি যানবাহনে অগ্নিসংযোগসহ বাড়ি এবং অফিস ভাঙচুর করা হয়। সংঘর্ষে উভয়পক্ষের ৬ জন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের ঢাকা মেডিকেলসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
আজ মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার সাওঘাট এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। গুলিবিদ্ধ ৬ জন হলো—স্বপন, রাজু, আলামীন, বাবু, রফিক ও সাগর।
সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে ছাত্রদল কর্মী রাফি আহমেদ ও রাজু ভূঁইয়ার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।
এছাড়া আহতদের মধ্যে স্বেচ্ছাসেবকদল কর্মী মো. ইমন, মো. রফিকুল ইসলাম, রুহুল আমিন, মনির হোসেন, ইয়ার হোসেন, তরিকুল ইসলাম, বিনয় বাবু, নুরুল ইসলাম ও মো. রাজু স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ জানায়, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু এবং সেলিম প্রধানের ঘনিষ্ঠ নেতাকর্মীরা এ সংঘর্ষে জড়ান। স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীদের নেতৃত্ব দেন সংগঠনটির উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম এবং ছাত্রদলের নেতৃত্বে ছিলেন জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি মাসুদুর রহমান। উভয়পক্ষ আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গুলি ছুড়েছেন।
ঘটনার একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, সন্ত্রাসবিরোধী স্লোগান দিয়ে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে একটি মিছিল বের করেন। মিছিলটি মহাসড়কের পাশে সেলিম প্রধানের বাড়ির দিকে গেলে সেখানে থাকা ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধে। পরে থেমে থেমে উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে।
এসময় সেলিম প্রধানের বাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার ঘটনাও ঘটে। এতে বাড়ির ভেতর ও বাইরে থাকা কয়েকটি যানবাহন পুড়ে যায়।
সংঘর্ষের সময় মুহুর্মুহু গুলি ও হাতবোমা বিস্ফোরণের শব্দে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন স্থানীয় লোকজন ও পথচারীরা। মহাসড়কের দুই পাশের ব্যবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ করে নিরাপদে আশ্রয়ে চলে যান।
স্বেচ্ছাসেবক দলনেতা রফিকুল ইসলামের দাবি, তাদের সন্ত্রাসবিরোধী মিছিলকে লক্ষ্য করে সেলিম প্রধানের বাড়ির ছাদ থেকে গুলি করা হয়। পরে স্থানীয় উত্তেজিত জনতা সেলিম প্রধানের বাড়ির সামনে থাকা কিছু যানবাহনে আগুন দেয়।
এদিকে ছাত্রদল নেতা মুসুদুর রহমানের অভিযোগ, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে সেলিম প্রধানের বাড়ি দখল করতে আসে। এসময় তার অনুসারী ছাত্রদল নেতাকর্মীরা ওই বাড়ির ভেতরে ছিলেন। বাড়ি দখলে বাধা দিলে তাদের উপর হামলা করা হয়।
এই ঘটনায় তাদের অন্তত ১০ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছে বলে দাবি এ ছাত্রদল নেতার।
স্থানীয়রা বলেন, গোলাকান্দাইল এলাকায় একটি আড়তের মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে। সেলিম প্রধান নিজে এই আড়তের জমির মালিকানা দাবি করলেও এটি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের দখলে ছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এটি দখলে নেন বিএনপি নেতা মোস্তাফিজুর রহমান দিপু ভূঁইয়ার অনুসারী লোকজন।
সোমবার মালিকানা ফেরত পেতে এলাকায় একটি মানববন্ধনের আয়োজন করেন সেলিম। সেখানে স্থানীয় কয়েকজন ছাত্রদল নেতাও তার পক্ষে উপস্থিত ছিলেন।
সেলিম প্রধানের অভিযোগ, অনলাইন ক্যাসিনোকাণ্ডে তার নাম আসার পর তিনি গ্রেপ্তার হলে আড়তের ১৬ বিঘা জমি দখলে নেন রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান ও তার অনুসারী লোকজন। এখনও আড়তটি হাবিবুরের ভাতিজা আইয়ুব খান ও আওয়ামী লীগ নেতা মজিবুর রহমানের দখলে রয়েছে। তাদের সহযোগিতা করছেন বিএনপি নেতা মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়ার অনুসারীরা।
“জেল থেকে বেরিয়ে আমি জমি ফেরত চাইলে আমার বাড়িতে তারা হামলাও করে। এবারও জমি ফেরত চেয়ে মানববন্ধন করায় আমার বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়েছে। গুলি ও বোমা ছুড়েছে।” এ ঘটনায় মামলা করবেন বলে জানিয়েছেন সেলিম প্রধান।
আড়তের তত্ত্বাবধানে থাকা আইয়ুব খানের দাবি, সংঘর্ষের ঘটনার সঙ্গে আড়তের কোনো সম্পর্ক নেই।
“সেলিম প্রধানের বাড়ি থেকে একদল সন্ত্রাসী স্বেচ্ছাসেবক দলের একটি মিছিলে গুলি চালায়। এ নিয়ে সেখানে সংঘর্ষ বাঁধে বলে শুনেছি”, দাবি করেন আইয়ুব।
ঘটনাস্থল থেকে অন্তত ১০টি গুলির খোসা ও একটি অবিস্ফোরিত হাতবোমা উদ্ধার করা হয়েছে জানিয়ে নারায়ণগঞ্জের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (‘গ’ সার্কেল) মেহেদী ইসলাম বলেন, “ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে পুলিশ কাজ করছে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারেও কাজ শুরু করেছি।” তবে, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত এই ঘটনায় থানায় কোনো মামলা হয়নি।
নারায়ণগঞ্জ সহকারী পুলিশ সুপার মো. মেহেদী ইসলাম জানান, খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে এবং আহতদের ঢাকা মেডিকেলসহ বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়। সংঘর্ষের খবর পেয়ে রূপগঞ্জ থানা-পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনাস্থল থেকে বেশ কয়েকটি গুলির খোসাসহ বিভিন্ন আলামত উদ্ধার করা হয়।
রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইফুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় তদন্ত করে জড়িতদের গ্রেপ্তারসহ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।