Friday, March 14, 2025

উপড়ানো হয়েছে দুই চোখ, মিন্টিজের জীবন অন্ধকার

আরও পড়ুন

আত্মীয়র বাসা থেকে ধরে নিয়ে শাজাহান মিন্টিজ নামে এক ব্যক্তিকে বেধড়ক পিটিয়েছে সংঘবদ্ধ একদল যুবক। শুধু তাই নয়, তুলে নেওয়া হয়েছে তাঁর দুই চোখ এবং কেটে দেওয়া হয়েছে ডান হাতের একটি আঙুল। মারধরে ভেঙে গেছে তাঁর বুকের হাড়; মেরুদণ্ডেও গুরুতর জখম হয়েছে। কয়েকটি হাসপাতাল ঘুরে বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মিন্টিজের স্ত্রী ফাতেমা বেগমের দাবি, জমিজমা নিয়ে বিরোধে স্বামী মিন্টিজের ওপর হামলা করা হয়েছে। স্বামীকে বাঁচাতে পুলিশের সহযোগিতা পেতে বারবার ৯৯৯-এ ফোন করলেও সাড়া মেলেনি। এমনকি এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত মামলা নেয়নি পুলিশ।

গত রোববার সকালে ভোলার চরফ্যাসন দক্ষিণ আইচা থানার চর আরকলমী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ওইদিন শাজাহান তাঁর বোনের বাসায় দাওয়াত খেতে গিয়েছিলেন। চুরির অভিযোগ তুলে সেই বাসা থেকে ২০ থেকে ২৫ জন যুবক তাঁকে তুলে নিয়ে যায়। পরে পিটিয়ে ও কুপিয়ে মারা গেছে ভেবে পরিত্যক্ত পুকুরপাড়ে ফেলে রাখে। স্থানীয়রা উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রথমে বরিশাল এবং পরে ঢাকায় পাঠানো হয়। রোববার রাতে তাঁকে ঢামেকে ভর্তি করা হয়। গুরুতর জখম দুই চোখে গত সোমবার দুপুরে অস্ত্রোপচার হয়েছে। আঘাতের পর চোখের আলো হারিয়েছেন তিনি।

আরও পড়ুনঃ  আন্দোলনে পুলিশের ৪৪ সদস্য নিহত, বেশিরভাগই কনস্টেবল-এসআই

গতকাল দুপুর ১টায় ঢামেকের তৃতীয় তলায় ৩০৩ নম্বর কক্ষে গেলে ৭ নম্বর শয্যায় দেখা গেল মিন্টিজকে। দুই চোখের পাতা একসঙ্গে করে দেওয়া হয়েছে। অন্যের সহযোগিতা ছাড়া শয্যা থেকে উঠতে পাচ্ছেন না তিনি। অস্ত্রোপচারে উপড়ানো দুই চোখের মধ্যে বালি ও ইটের গুঁড়া পাওয়া গেছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চক্ষু বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মোস্তাক আহাম্মদ সমকালকে বলেন, মিন্টিজের দুই চোখের মধ্যে থাকা সব কিছু বের করে ফেলা হয়েছে। তাঁর চোখের দৃষ্টি আর না-ও ফিরতে পারে।

আরও পড়ুনঃ  অন্তঃসত্ত্বা নারীকে ‘ধর্ষণচেষ্টা’, স্বামীর পিটুনিতে যুবলীগ নেতা নিহত

মিন্টিজের ভাই শাহিন বলেন, আমাদের বাবার জমি স্থানীয় মাদ্রাসা অধ্যক্ষ মাওলানা লোকমান হোসেনের নামে রেকর্ড হয়ে যায়। এরপর থেকে আমাদের জমি তারা দখল নিতে বিভিন্ন সময় হয়রানি হামলা চালিয়ে আসছিল। রোববার লোকমানের ছেলে নাইম, হাসিব, সাকিবের নেতৃত্বে একদল যুবক আমার ভাইকে আত্মীয়র বাসা থেকে তুলে নিয়ে হাত-পা ভেঙে দেয়। তারা চোখ তুলে ফেলে। ভাইয়ের চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা প্রয়োজন। কীভাবে তাঁর চিকিৎসা হবে কিছুই বলতে পারছি না।

আরও পড়ুনঃ  দরজা ভেঙে দাদি ও নাতিকে কুপিয়ে হত্যা

স্থানীয় এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, রোববার সকালে চর ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ও নজরুল নগর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মাওলানা লোকমান হোসেনের ছেলে ছাত্রদল কর্মী মো. সাকিব, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী নাঈম হাসিব, চর কলমী ইউনিয়নের বিএনপির ৮ ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি পল্লি চিকিৎসক জাহাঙ্গীরসহ তাদের দলবল নিয়ে মিন্টিজকে আত্মীয় বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে হামলা করে।

অভিযোগ অস্বীকার করে মো. সাকিব বলেন, আমাদের সঙ্গে জমি বা ব্যক্তিগত কোনো বিরোধ নেই। আগের চুরির ঘটনায় তাঁকে এলাকাবাসী গণধোলাই দিয়েছে। তাঁর নেতৃত্বেই হামলার হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ